শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯–২৪) যত বড় বড় ‘দুষ্কর্ম’ হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো পঞ্চদশ সংশোধনী। ২০১১ সালে অষ্টম সংসদে দুই–তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছিল।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক কিছু ফিরিয়ে আনা হয়েছে—আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়েছিল; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পঞ্চদশ সংশোধনী ছিল দলটির ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের একটি উদ্যোগ।
শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল নয়, আরও অনেক কারণেই পঞ্চদশ সংশোধনীকে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ‘অসাংবিধানিক সংবিধান সংশোধন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ২০১১ সালেই লিখেছিলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আদালতে চ্যালেঞ্জযোগ্য’; কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে আদালতের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে সেই চ্যালেঞ্জ কেউ করেননি বা করা সম্ভব ছিল না।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পঞ্চদশ সংশোধনী আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। এর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারাসহ আরও কিছু ধারা বাতিল হয়ে গেল। আদালত বলেছেন, উল্লিখিত ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিষয়টি শুধু সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেনি, একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে এর অনেক সুদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ সংশোধনীর ফলাফল হিসেবে নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়; ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’ এবং ২০২৪ সালে ‘ডামি নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন প্রলম্বিত হওয়ার সঙ্গে পঞ্চদশ সংশোধনীর সম্পর্ক তাই ‘অবিচ্ছেদ্য’।